প্রভাষক (ইংরেজি: Lecturer) হলো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের শিক্ষকতা পেশার একটি প্রাথমিক শিক্ষায়তনিক পদ। যারা প্রথমবার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন, তাদের সাধারণত প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
অন্য দিকে অধ্যাপক (ইংরেজি: Professor) উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার পেশায় সর্বোচ্চ এবং অত্যন্ত সম্মানজনক একটি পদ। একজন শিক্ষক যখন দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, গভীর জ্ঞান, উল্লেখযোগ্য গবেষণা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের মধ্য দিয়ে যান, তখনই তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন।
আরও দেখুনঃ প্রভাষক মানে কি?
প্রভাষক ও অধ্যাপক এর পার্থক্য
প্রভাষক ও অধ্যাপক উভয়ই শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদ, তবে তাদের পদমর্যাদা, অভিজ্ঞতা, দায়িত্ব ও সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে কিছু পার্থক্য রয়েছে। নিচে এই পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো:
প্রভাষক | অধ্যাপক |
এটি সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের প্রাথমিক পদ। নতুন শিক্ষকরা প্রথমে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান। | এটি শিক্ষকতার পেশায় সর্বোচ্চ পদমর্যাদা। প্রভাষক থেকে শুরু করে সহকারী অধ্যাপক (Assistant Professor), সহযোগী অধ্যাপক (Associate Professor) হয়ে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, গবেষণা ও প্রকাশনার পর একজন শিক্ষক অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। |
প্রভাষক হওয়ার জন্য সাধারণত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (যেমন: চার বছর মেয়াদী স্নাতক সম্মান এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি) ও ভালো একাডেমিক ফলাফল প্রয়োজন হয়। তাদের সাধারণত শিক্ষকতার পূর্ব অভিজ্ঞতা কম বা নাও থাকতে পারে। | অধ্যাপক হওয়ার জন্য প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘ শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা (সাধারণত ১৫-২০ বছর বা তার বেশি) এবং উল্লেখযোগ্য গবেষণা, প্রকাশনা (যেমন: স্বীকৃত জার্নালে বহু প্রবন্ধ প্রকাশ), তত্ত্বাবধান (যেমন: পিএইচডি শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধান) ও শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান থাকা আবশ্যক। অনেক ক্ষেত্রে পিএইচডি ডিগ্রিও অপরিহার্য। |
প্রভাষকদের প্রধান দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদের পাঠদান। তারা ক্লাস নেওয়া, সিলেবাস অনুযায়ী পড়ানো, পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি ও খাতা দেখা ইত্যাদি কাজ করেন। গবেষণার সুযোগ থাকলেও এটি তাদের প্রাথমিক দায়িত্ব নাও হতে পারে। | অধ্যাপকদের দায়িত্ব আরও বিস্তৃত। পাঠদানের পাশাপাশি তারা গবেষণা পরিচালনা, গবেষণা তত্ত্বাবধান, নতুন পাঠ্যক্রম প্রণয়ন, বিভাগীয় বা অনুষদীয় বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন এবং নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা শিক্ষাক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। |
তুলনামূলকভাবে তাদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা অধ্যাপকদের চেয়ে কম হয়। | অভিজ্ঞতা ও পদমর্যাদা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা (যেমন: গবেষণা অনুদান, উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটি ইত্যাদি) বৃদ্ধি পায়। জাতীয় অধ্যাপকগণ বিশেষ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ও ভাতা পান। |
তাদের প্রশাসনিক ক্ষমতা সীমিত থাকে। | বিভাগীয় প্রধান, ডিন, বা অন্যান্য উচ্চ প্রশাসনিক পদে তাদের নিযুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে প্রভাব অনেক বেশি। |
সংক্ষেপে, প্রভাষক হলো শিক্ষাক্ষেত্রে প্রবেশদ্বার, যেখানে অধ্যাপক হলো দীর্ঘদিনের কঠোর পরিশ্রম, অভিজ্ঞতা, গবেষণা ও শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের ফলস্বরূপ প্রাপ্ত সর্বোচ্চ পদ।