বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘এন্ট্রি লেভেল’ শিক্ষক পদে প্রার্থী বাছাইয়ের অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে ‘অনুত্তীর্ণ’ ঘোষিত প্রার্থীরা আবারও ই-সনদ পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের মেরিট লিস্ট প্রকাশ, শুরু নিয়োগ আবেদন
গত ২৭ জুন, শুক্রবার, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা বলেন, “আমরা মেধাবী ও পরিশ্রমী হয়েও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ফেল করানো হয়েছে। এই বৈষম্যমূলক ফলাফল অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে। তা না হলে হাজারো তরুণ শিক্ষকের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে এবং এনটিআরসিএর ওপর শিক্ষার্থীদের আস্থা নষ্ট হবে।”
তাদের যুক্তি ও দাবিগুলো কী?
সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থী সোনিয়া আক্তার লিখিত বক্তব্যে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। সংক্ষেপে সেগুলো হলো:
- ৪০ শতাংশ নম্বর পেলে ভাইভা পরীক্ষায় পাস—বিধিমালায় এমনই বলা আছে। তাই যাঁরা এই শর্ত পূরণ করেছেন, তাঁদের সবাইকে ই-সনদ দিতে হবে।
- লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতেই যেহেতু সনদ প্রদান হয় এবং ভাইভায় অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় ৪০ শতাংশ বা তার বেশি পেয়েছেন, তাই সবাইকে উত্তীর্ণ হিসেবে গণ্য করতে হবে।
- ভিন্ন প্রশ্ন কাঠামো ও মানবণ্টন অনুসরণ করে এনটিআরসিএ যেভাবে বিকল্প প্রশ্ন ছাড়াই পরীক্ষা নিয়েছে, সেটি অনৈতিক ও বিভ্রান্তিকর। এই অবস্থায় লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ফেল করানো অন্যায্য।
- ভাইভা সনদে ১২ নম্বর থাকা সত্ত্বেও অনেকে চূড়ান্ত ফলাফলে ফেল, এটি অসংগতি—তাঁদের মানবিক বিবেচনায় হলেও উত্তীর্ণ করতে হবে।
- ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এসব প্রার্থীদেরও লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতে মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে।
মানবিকতা নয়, প্রয়োজন ন্যায্যতা
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অনুত্তীর্ণ প্রার্থীদের দাবি—এটি কেবল আবেগের জায়গা নয়, বরং নীতিগত ও বিচারসংগত এক দাবি। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, বিধিমালার শর্ত মানা হয়নি, যা প্রশাসনিকভাবে অনিয়ম।
তাঁদের মতে, একই ধরনের পরিস্থিতিতে আগেও কিছু প্রার্থীকে ই-সনদ দেওয়া হয়েছে বা ফলাফল সংশোধন হয়েছে—তাহলে এবার কেন নয়?
বিতর্কিত লিখিত পরীক্ষা ও প্রশ্ন কাঠামো
এবারের নিবন্ধনে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল “বিকল্প প্রশ্নবিহীন ও পূর্ব ঘোষণাবিরোধী মানবণ্টন”। পরীক্ষার্থীদের অনেকেই এই পরীক্ষার প্রশ্নের ধরণ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন, যা তাঁদের প্রস্তুতিকে বিফল করেছে বলে দাবি।
আরও পড়ুনঃ ই-প্রত্যয়নপত্র ডাউনলোড ও সংশোধনের নির্দেশনা প্রকাশ
তাঁদের মতে, ভুল প্রশ্ন কাঠামো এবং অসমঞ্জস মূল্যায়নের দায় প্রার্থীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া অনৈতিক ও অন্যায্য।
এনটিআরসিএর অবস্থান কী?
এখন পর্যন্ত এনটিআরসিএ (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) পক্ষ থেকে এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে এর আগে একাধিক পরীক্ষার ফলাফলে ভুল স্বীকার করে কিছু সংশোধনী এনটিআরসিএ দিয়েছিল।
ভবিষ্যৎ কী?
প্রার্থীরা বলছেন, তাঁরা প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেবেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদানসহ দেশব্যাপী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
এনটিআরসিএর মতো একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান থেকে স্বচ্ছ, নির্ভরযোগ্য ও ন্যায্য মূল্যায়ন প্রত্যাশা করে লাখো তরুণ। ই-সনদ বঞ্চিতদের দাবি যদি বাস্তব ভিত্তিসম্পন্ন হয়, তবে তা দ্রুত পর্যালোচনার দাবি রাখে।
কারণ, শিক্ষকতা শুধু একটি চাকরি নয়—এটি একটি আস্থা ও মর্যাদার দায়িত্ব। আর সেই দায়িত্বে আসার পথটি যদি বিতর্কিত হয়, তার প্রভাব পড়বে পুরো জাতির ভবিষ্যৎ গঠনে।